ড্যান্স জোকি ।। শেখ সাদী মারজান


টিভিতে নিউজ স্ক্রল যাচ্ছে। ব্রেকিং নিউজ! ডিজে সুন্দরী সানজিয়া গ্রেফতার। পরেরদিন দুপুরের সংবাদ বুলেটিনে জানা গেল বিজ্ঞ আদালত তাকে তিনদিনের রিমান্ড দিয়েছে। রিমান্ড জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া গেল চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য। সেই তথ্যমতে শুরু হলো অভিযান।  

    ও লেভেলের শিক্ষার্থী সাইফ; ধনী বাবা-মার একমাত্র সন্তান। এস গ্রপ অব কোম্পনীর চেয়ারম্যান ওর বাবা। সাইফের জন্য জাপান থেকে একটি টয়োটা গাড়ী আমদানী করা হয়েছে গত মাসে। আড্ডা প্রিয় সাইফ বন্ধুদের সাথে সময় কাটিয়ে নিজেই গাড়ী ড্রাইভ করে মধ্য রাতে বাসায় ফেরে । এটা ওর দৈনন্দিন রুটিন।  পড়াশোনার চেয়ে আড্ডার রুটিন সে শক্তভাবে বজায় রাখে। ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ায় মনোযোগ বেড়েছে তার। বেশ কিছু নতুন মেয়ে বন্ধু জুটেছে সেখানে। তাদের মধ্যে অন্যতম বন্ধু হচ্ছে সানজিয়া। সানজিয়া প্রফেশনাল ড্যান্স জোকি সংক্ষেপে যাকে বলে ডিজে। নামী-দামী হোটেল, ক্লাব, সুইমিংপুলগুলোতে তার শো হয়। সেখানে অনেক ধনী পরিবারের ইংরেজী মাধ্যমে পড়–য়া অতি আধুনিক ছেলে-মেয়েরাসহ উচ্চবিত্ত শ্রেণির লেকজান আসে। মাঝ রাত পর্যন্ত নেচে গেয়ে বিদেশী রঙিন পানি পান করে, নেশায় মাতোয়ারা হয়ে বাসায় ফেরে তারা।  


     কিছুদিন যাবত সানজিয়ার সাথে সাইফের ইনবক্সে কথোপকথন হচ্ছে। মাঝে-মধ্যে দেখাও করতে লাগলো ওরা। সানজিয়া তার ডিজে শো দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানালো। ডিজে শো দেখার জন্য নামী এক পাঁচ তারকা হোটেলে গেলো সাইফ। তিনহাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটে  প্রবেশ করে দেখতে পেল, সেখানে তার মতো আরো অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা এসেছেন। সবাই অতি-মডার্ন পোষাক গায়ে জড়ানো। 

     সানজিয়া প্রথমেই মাইক্রোফোনে হুরররে বলে চিৎকার দিয়ে সকলকে স্বাগত জানালো। এক মিনিট কথা বলে তার শো শুরু করলো। প্রথমেই বিভিন্ন ধরনের শব্দের প্রকরণ বাজাতে লাগলো; সেই সাথে অস্পষ্ট উচ্চারণে ইংরেজী-বাংলা-হিন্দি প্রভৃতি ভাষার উত্তেজনাপূর্ণ শব্দ-বাক্য ব্যাবহারের মাধ্যমে শুরু হলো ঝলমলে বাহারী রঙের আলোর ঝলকানিতে উচ্চ শব্দে বিদেশী যন্ত্র-গানের সুরে-তালে বেসামাল নাচ। ছেলে-মেয়ে একসাথে নাচছে। কেউ একা, কেউ সঙ্গিনীর হাত ধরে। ছোট ছোট কয়েকটি গ্রুপের মতো লক্ষ্য করা গেল।  কারো কারো হাতে বিদেশী রঙিন পানির বোতল। জগতের কথা মনে নেই যেন ওদের। ওরা যেন ভিন্ন আরেক পৃথিবীতে আছে তখন। মাঝে মাঝে সানজিয়া চিৎকার করে সবাইকে যেন উন্মত্ত আনন্দ করতে উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছে। শব্দ কমছে বাড়ছে। ঝলমলে বাহারী রঙের আলো জ¦লছে নিভছে। পরিবর্তন হচ্ছে রিমিক্স গানগুলো।  সাইফ বেশ ইনজয় করলো পুরো অনুষ্ঠানটি। বাংলাদেশে এমন মাস্তির জায়গা আছে! সাইফের সে ধারনা আগে ছিল না।  বাসায় ফিরে কল করে সানজিয়াকে অনুষ্ঠানের ভালো লাগা সম্পর্কে বললো, সেই সাথে ধন্যবাদ জানালো। পরবর্তী অনুষ্ঠানে যেন তাকে জানায়; সে অনুরোধও করলো। সে এখন থেকে নিয়মিত তার সব অনুষ্ঠান দেখবে ইচ্ছা প্রকাশ করলো। 


     এরপর থেকে সানজিয়ার শো-গুলোতে নিয়মিত যাওয়া শুরু করলো সাইফ। কখনও পাঁচ তারকা হোটলে, অভিজাত ক্লাবে, কখনো বা  ভিআইপি সুইমিংপুলে। এক পর্যায়ে সানজিয়ার সাথে অনেকটা গভীর সম্পর্ক তৈরী হলো তার।  প্রতিদিন সানজিয়ার সাথে কথা না বললে তার ভালো লাগে না। আস্তে আস্তে দেখা করা, কিছু সময় একসাথে থাকা, উপহার দেয়া নিয়মিত রুটিনে পরিণত হলো। সানজিয়াকে ছাড়া সে কিছু ভাবতেই পারছে না। সে এখন যেন তার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় তো বটেই দামী মানুষও যেন। 

     কিন্তু তার মতো আরো অনেক ছেলের সাথে সানজিয়ার এমন গভীর সম্পর্ক রয়েছে । বিশেষ করে তার বন্ধুদের তালিকায় ধনাঢ্য পরিবারের ছেলেদের সংখ্যা বেশি। সাইফ এতোটা আগে ভাবেনি, বুঝেনি। কিন্তু দিন যেতে সে সানজিয়ার অন্য রুপ দেখতে পেল। সাইফ তাকে বোঝাতে চেষ্টা করলো। সে তাকে অনেক ভালবাসে। সারাজীবনের সঙ্গী করতে চায়। কিন্তু সানজিয়া স্বাধীনচেতা। সে এতসব ভাবে নি। ভাবার সময়-ই বা কোথায়? যেহেতু সাইফের মতো বহু ছেলে তার কব্জায়। সুতরাং এসব ব্যাপার সে পাত্তা-ই দেয় না।  

    সাইফ সানজিয়াকে বোঝাতে গেলেই Ñ সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হলো। কিন্তু সানজিয়াকে সে অনেক ভালবাসে। তাকে নিয়ে সে ঘর বাধার স্বপ্ন দ্যাখে। এত স্মৃতি, এত সুন্দর সময় পার করার পর এখন সে তাকে ছেড়ে যাবে। মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাবে দু’বছরের সম্পর্ক। রাত যত গভীর হয় সাইফের কষ্ট তত বাড়তে থাকে। এদিকে লেখা-পড়ার বারোটা তো বেজেই গেছে। সাইফও মনে মনে পণ করে নিলো; সানজিয়াকে সে এত সহজে ছাড়বে না। তাকে যত অবহেলা করুক না কেন, সে তার চেষ্টা করেই যাবে। সে ভালবাসার দাবীতে তার কাছে বারবার ধর্না দিতে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ার ইনবক্সে, মোবাইল কলে বিভিন্নভাবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। ইনবক্স থেকে সাইফকে ব্লক করে দেয়। এরপর ফেলা হয় মোবাইলের ব্ল্যাক লিস্টে। অসহায়ের মতো সাইফ ডিজে শোগুলোতে অংশ নিয়ে উন্মত্ত নাচের সময়ও চিৎকার করে বলতে থাকেÑ আই লাভ ইউ সানজিয়া। আমাকে ছেড়ে যেওনা প্লিজ। তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কিছু ভাবতে পরি না। আমি তোমার সবকথা মেনে নিতে রাজি।  আমার কোনো ভুল হলে ক্ষমা করে দিও। এভাবেই কেটে গেল আরো একবছর। 

      এরই মাঝে বিশেষ একটি দিন উপলক্ষ্যে অভিজাত হোটেলে সানজিয়ার একক শো। সাইফও ঢুকলো টিকিট কেটে। রঙিন পানির বোতল হাতে সেও নাচতে লাগলো। শো শেষে সবাই যখন বাসায় ফিরছে, তখন সাইফ এগিয়ে গেল সানজিয়ার কাছে। সানজিয়াও হাসি-মুখে এগিয়ে এসে সাইফের হাত ধরলো। তারপর ঠোটে চুমু দিয়ে বললো- চলো বাবু সোনা। হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল একটা রুমের দিকে। এটা নতুন কিছু নয়, এরকম আগেও হয়েছে; সম্পর্ক যখন স্বাভাবিক ছিল। 


     পরদিন সকালে টেলিভিশনের খবর হোটেলের বাথরুমে এস গ্রুপের চেয়্যারম্যানের একমাত্র সন্তান সাইফের লাশ। প্রাথমিক অবস্থায় ধারনা করা হলো যে, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারনে এই অকাল মৃত্যু হতে পারে। পরবর্তীতে লাশ ময়না তদন্তের রিপোর্টে পাঠালে জানা গেল শুধু মদ্যপান কারন নয়; তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। 

        শুরু হলো তদন্ত। সিসি টিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ। ফুটেজে দেখা গেল সাইফের হাত ধরে রুমে নিয়ে যাচ্ছে সানজিয়া। তার ৩০ মিনিট পর রুম থেকে বের হলো সানজিয়াসহ আরো দু’জন মাঝ বয়সী পুরুষ। 


1 comment:

Unknown said...

Excellent Story

স্বাধীন জাতির স্বাধীন‌ পিতা একটি সফল প্রযোজনা ।। শেখ সাদী মারজান

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিলো জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হ...