স্বাধীন জাতির স্বাধীন‌ পিতা একটি সফল প্রযোজনা ।। শেখ সাদী মারজান

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিলো জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার কবিতা অবলম্বনে, মীর বরকতের নির্দেশনায়; উদ্ভাসন আবৃত্তি দলের প্রযোজনা ‘স্বাধীন জাতির স্বাধীন‌ পিতা’। প্রযোজনা শুরু হয় হৃদয় ছোঁয়া ধারা বর্ণনার মধ্য দিয়ে। তারপর শাস্ত্রীয় নৃত্য এবং হামিং। কিন্তু আমার জ্ঞানেন সীমাবদ্ধতায় এখানে শাস্ত্রীয় নৃত্যের অর্থ বুঝলাম না। এরপর আবৃত্তির মাধ্যমে শুরু হয় মূল প্রযোজনা। কোরাস, বৃন্দ বা সম্মিলিত আবৃত্তিতে মুখরিত আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তন। দর্শকরা মঞ্চে নয়জন আবৃত্তিশিল্পীর সমন্বিত পরিবেশনা শুনছেন, সেই সাথে ওদের অভিনয়ও দেখছেন। কিন্তু হৃদয় কেড়ে নিল তামান্না তিথির পরিবেশনা। যদিও তাদের মধ্য থেকে একমাত্র তামান্না তিথিকেই আমি আগে থেকে আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে জানি কারণ তিনি আবৃত্তি অঙ্গনের অতি পরিচিত মুখ। প্রযোজনার শিরোনাম আগে থেকে জানা থাকলেও, শুরু হওয়ার কিছু সময় পর বুঝতে পারলাম মূল চরিত্র 'খোকা' আর কেউ নন; তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পুঁথির সুর, তবলার তাল আর কবিতার দোলায়িত ছন্দে উদ্ভাসনের শিল্পীদের অনবদ্য উচ্চারণ, চোখ জুড়ানো আলোর প্রক্ষেপণ এবং আবহ সঙ্গীতের মূর্চ্ছনায় আমিও যেন হারিয়ে যাচ্ছিলাম প্রায় শত বছর আগে। কবির সাবলীল রচনা আর উদ্ভাসনের শিল্পীদের হৃদয় ছোঁয়া পরিবেশনায় তখন আমি অনুভব করি ৭০/৮০ বছর আগের বাঙলার পরিস্থিতি।

বাংলা একাডেমির মঞ্চে উদ্ভাসনের শিল্পীরা

তরুণ আবৃত্তিকাররা স্মরণ করিয়ে দিলো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময় ও সেই সংগ্রামের দিনগুলো। রফিক, সালাম, বরকত, শফিউর, জব্বারের পথ ধরে বঙ্গবন্ধুর ডাকে জেগে উঠেছিল সাড়ে সাত কোটি বাঙালি। জাতিসত্তার কবি নুরুল হুদা তার কাব্যে বাঙালি বন্দনা করেছেন। গেয়েছেন বাঙালির বীরত্বগাঁথা। তুলে ধরেছেন প্রাচীন বাংলার ইতিহাস। কাব্যের মাঝে বুনে দিয়েছেন চিরায়ত বাংলার কাহিনী। মহাভারত, রামায়নও বাদ যায় নি। হৃদয় ছোঁয়া কবিতার লাইনগুলো ঠিক আমার স্মৃতিতে নেই। তবে দু’একটি লাইন স্মৃতিতে গেঁথে আছে।

‘বাঙালি পেরিয়ে এলো শত শতাব্দীর ইতিহাস’

দুঃখ ভারাক্রান্ত মুজিবের ভাষণে ১৯৭১ সালে বাংলার মানুষ জেগে উঠেছিল, মুক্তি চেয়েছিল। তারপর রচিত হলো বাঙালির মুক্তির সনদ। ১৭ মার্চ, ২০২৪ বাংলা একাডেমিতে উদ্ভাসনের শিল্পীদের কন্ঠে ফুঁটে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের জ্বলন্ত ইতিহাস। মনে হচ্ছিলো মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আবার কখনো মনে হচ্ছিলো চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাই বলছে তারা। নবীন আবৃত্তিকারদের কণ্ঠে ছিলো রাগ, বিরাগ, অনুরাগ। ‘জেগে থাক একাত্তর.....’ এ ধরণের লাইনগুলো যখন তারা উচ্চারণ করছিলো, তখন মনে হচ্ছিলো আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে কবিতার শব্দ থেকে। যদিও তরুণ আবৃত্তিকারদের দু'একটা উচ্চারণ কানে লেগেছে। তবে এমনটা সবার কানে লাগবে না বলে আমার মনে হয়। তবে সব মিলিয়ে মুহম্মদ নুরুল হুদার কবিতা অবলম্বনে নির্মিত ‘স্বাধীন জাতির স্বাধীন‌ পিতা’ একটি সফল প্রযোজনা বলে আমার মনে হয়েছে।

বাংলা উচ্চারণের প্রয়োগিক কৌশল

 

বাংলা উচ্চারণের প্রয়োগিক কৌশল



আর জোর দিয়ে উচ্চারণ করো-

 
১. খাঁ খাঁ খিল্ খিল্ । ঘন ঘন ঘিন ঘিন 
২. খিক্ খিক খর্ খর্ । খুর্ খুর্ ঘর্ ঘর্ 

এবার চ, ছ, জ, ঝ জোর দিয়ে উচ্চারণ করো- 


৩. চা চা ছি ছি । ঝাঁ ঝাঁ ঝি ঝি 
৪. গিজ্ গিজ্ গজ্ গজ্ । হিজি বিজি খচ্ খচ্ 
৫. চিক চিক জির্ জির্ । জর্ জর্ ঝির্ ঝির্ 

টাং টুইস্টার

 
১. পাখি পাকা পেঁপে খায় 
২. পাঁচ ভাই মাছ খাই 
     মাছ খাই পাঁচ ভাই 
৩. জলে চুন তাজা 
    তেলে চুল তাজা 
৪. ভাজাভুজি ভেজে রাখো 
    ভোরে উঠে ভেজে খাবো 
৫. নীল রিলে লাল রিল 
     লাল রিলে নীল রিল

বাংলাদেশে ইকেবানা চর্চা ।। শেখ সাদী মারজান

ইকেবানা হচ্ছে জাপানী পদ্ধতিতে ফুল সাজানোর শিল্প। এই প্রাচীন শিল্প হিয়ান যুগ থেকে জাপানে প্রচলিত। জাপানের তিনটি শাস্ত্রীয় শিল্পের মধ্যে এটি একটি।

বাংলাদেশে ইকেবানা চর্চা শুরু হয় স্বাধীনতার পর থেকেই। ১৯৭৩ সালে জাপান দূতাবাসের সহযোগিতায় ড.একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন স্যারের হাত ধরে গঠিত হয় বাংলাদেশ ইকেবানা অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। বাংলাদেশে ইকেবানার প্রচার ও প্রসারে অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেনের অবদান অনস্বীকার্য। 

২০২৩ সালে বাংলাদেশ ইকেবানা অ্যাসোসিয়েশন ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে। এর আগে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করে এই সংগঠন। বিআইএ-র অধীনে বর্তমানে তিনটি ইকেবানা স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি শাহীনুর বেবী এবং সিইও জনাব মাসুদ করিম।


বাংলাদেশ ইকেবানা অ্যাসোসিয়েশনের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে জাপানী রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি


সাহিত্য সারথি রেজওয়ান শাওন ।। শেখ সাদী মারজান

সময়ের একজন প্রতিশ্রুতিশীল সাহিত্যকর্মী রেজওয়ানুল ইসলাম শাওনের লেখক নাম রেজওয়ান শাওন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, পাবলিক লাইব্রেরী, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমিসহ ঢাকার সাহিত্য আসরে সরব উপস্থিতি ছিলো তাঁর। উচ্চ শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে এই নিবেদিত সাহিত্যকর্মী এখন যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টলে অবস্থান করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেধাবী শিক্ষার্থীর সাথে আমার পরিচয় কবিতা আবৃত্তির সূত্রে। 

রেজওয়ান শাওন

শাওনের বাড়ি আর আমার বাড়ি একই এলাকায় হলেও তাঁর সাথে আমার পরিচয় ছিলো না। এক দশক আগে একজন তুখোড় সাহিত্য সংগঠকের মাধ্যমে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হয়, তখন ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী সরকারী রাজেন্দ্র কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন রেজওয়ান শাওন। ইতোমধ্যেসহস্র চোখ মেলেনামে একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে তাঁর। প্রেম, দ্রোহ, উপেক্ষা, অপেক্ষা, প্রকৃতি, সৌন্দর্য এবং মানবতার বহুরূপ ফুটে উঠেছে সহস্র চোখ মেলেকাব্যগ্রন্থের পঙক্তিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে বেশ কয়েকটি সাহিত্য সন্ধ্যার সফল আয়োজক ছিলেন এই তরুণ সাহিত্যকর্মী। এছাড়া, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিতমহাপৃথিবী সাহিত্য সংযোগধারাবাহিক অনুষ্ঠানেরও সহ-আয়োজক ছিলেন তিনি। ঢকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালীন ডাকসুর নির্বাচনে সূর্যসেন হলের পাঠাগার সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। শাওন শুধু সাহিত্যচর্চাই করেন না, তিনি আলোকিত জীবনের স্বপ্ন দেখে, মানুষকেও আলোকিত জীবনের স্বপ্ন দেখান। ইট-পাথর-কংক্রিটের শহরে থেকেও শেকড় না ভোলা কৃতি সন্তান তিনি। ঢাকা শহরের অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি তাকে তাঁর কাজের মাধ্যমে চিনেন, জানেন। অগ্রজদের যেমন তিনি সম্মান করেন, অনুজদেরও তেমন স্নেহ করেন। অনুজরাও তাকে সম্মান করেন, ভালবাসেন; তাঁর দেশে না-থাকাটা অনুভব করেন। রেজওয়ান শাওনের কর্মময় জীবন একদিন ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে বলে আমি মনে করি। তাঁর সাহিত্য পাঠক মহলে সমাদৃত হবে বলে আশা করি। এই সাহিত্য সারথিকে শুভ কামনা জানিয়ে হেলাল হাফিজের কবিতার লাইন দিয়ে শেষ করছি। এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/মিছিলের সব হাত/কণ্ঠ/পা এক নয়।

তরুণদের চেপে রাখার অপচেষ্টা ।। শেখ সাদী মারজান

ঢাকার সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। ছোট বড় একাধিক সংগঠনে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সাহিত্য-সংস্কৃতির সুবাদে ওপার বাংলা ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে অনেকবার। অনেক প্রখ্যাত কবি, লেখক, শিল্পী ও সংগঠকের সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য হয়েছে যেমনি, তিক্ত অভিজ্ঞতাও হয়েছে তেমনি। 

শেখ সাদী মারজান
শেখ সাদী মারজান
অগ্রজ অনেক লেখক-শিল্পী প্রায়ই তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, অমুক ঠিক নেই, তমুকের আদর্শে সমস্যা আছে; এরকম নানা ধরনের কথা বলে তরুণ লেখক, শিল্পীদেরকে পরোক্ষভাবে নির্দিষ্ট কিছু মানুষের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করেন তারা। আমার খুব কাছের একজন অগ্রজ কবি-লেখক মাঝে মধ্যেই দ্বিতীয় আরেকজন খ্যাতিমান লেখকের সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলেন। যার কারণে দ্বিতীয় লেখকের থেকে আমি দূরে থেকেছি। তাঁর সম্পর্কে নেগেটিভ একটা ধারণা আমার মনের ভেতর জন্ম নিয়েছিল। কয়েক বছর পর কলকাতার এক সিনিয়র সাংবাদিক, প্রাবন্ধিকের কল্যাণে দ্বিতীয় লেখকের সাথে আমার দীর্ঘ আলাপের এক পর্যায়ে জানতে পারি, আমার খুব কাছের ওই লেখক, দ্বিতীয় লেখকের অতি আপন মানুষ। বিপদে আপদে তাঁর থেকে আর্থিক সহযোগিতাও নেন। এরপর বেশ কিছু দৈনিক পত্রিকার কাটিং বের করে দেখালেন, তাতে তাঁর সাহিত্য-কর্মের বেশ কয়েকটি পর্যালোচনাও লিখেছেন তিনি। এবার আসি আরেকটি ঘটনায়: আরেকজন সিনিয়র লেখক আমাকে বললেন – ‘অমুকের পত্রিকায় লেখা দিয়ে নিজের ব্যক্তিত্ব নষ্ট করাটা ঠিক না, যেখানে সেখানে লেখা দেয়া উচিৎ না’। তার পরামর্শে আমি যে কোন ছোট কাগজে লেখা দেয়া বন্ধ করে দেই। বছর দেড়েক পরে এক সন্ধ্যায় দেখতে পাই, সেই ছোট কাগজে তার একটি লেখা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি গর্ব করে সেই লেখাটি সবাইকে দেখাচ্ছেন। সেই সাথে ওই ছোট কাগজটিরও প্রশংসা করছেন। এরকম বেশ কয়েকটি ঘটনা আছে মঞ্চে কবিতা পড়ার ব্যাপারেও। ওপার বাংলার সাহিত্য সম্মেলনে  আমার মতো তরুণদের অংশ নেয়া, অনেকে ভালো চোখে দেখেননি। ওখানে না যাওয়ার পক্ষে যুক্তিসহকারে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এক দশক পরে এখন মনে হচ্ছে এ দেশের কিছু সিনিয়র লেখক-শিল্পীরা তরুণদের চেপে রাখার চেষ্টা করেন। ওনারা  জানেন না? সূর্যকে কখনো চেপে রাখা যায় না। হেলাল হাফিজের কবিতার লাইন দিয়েই শেষ করি: এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/মিছিলের সব হাত/কণ্ঠ/পা এক নয়।

 

শেখ সাদী মারজান

লেখক, সাংবাদিক ও আবৃত্তিকার

সিতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডে ।। শেখ সাদী মারজান

সিতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডে

জ্বলছে শত শত কন্টেইনার

আগুন নেভাতে লড়ে যাচ্ছে

অদম্য ফায়ার ফাইটার। 


মায়ের কোলে চড়ে নিষ্পাপ শিশু এসেছে- প্রিয় বাবার খোঁজে

যুবতী বধু চেয়ে আছে প্রিয়তম স্বামীর পথপান 

মা-বাবা খুঁজছে বুকের ধন, কলিজার টুকরা সন্তান।


মানুষেরা দূর থেকে ছুটে গিয়েছে 

সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে

ছুটে গিয়েছে সেনাবাহিনী

ছুটে গিয়েছে ব্লাড ডোনার

ছুটে গিয়েছে স্বেচ্ছাসেবকের দল 

বিনামূল্যে ওষুধ দিচ্ছে ফার্মেসীগুলো। 


আগুন তবুও থামছে না

কোন কিছুই মানছে না!


ঝরে গেল কতগুলো তাজা মানুষের প্রাণ

বিষ্ফোরণে উড়ে গেল কত দেহের অঙ্গ। 

শোক বার্তা জানিয়েছেন আমাদের রাষ্ট্র প্রধান

তহবিল ঘোষণা করেছে মন্ত্রণালয়; দেবে অনুদান 

সন্তানহারা পিতার মন কীভাবে জুড়ায়

পিতাহারা সন্তানের আশা না ফুরায়

যুবতী বিধবা গৃহবধুর বুক ফাটা চিৎকার 

আকাশে বাতাসে মিশে যায়।



জীবন গণিত ।। শেখ সাদী মারজান

রাত নামতেই মনের পর্দায় ভেসে উঠে

জীবন হিসাবের দীর্ঘ টালি খাতা

যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ; আরও কত জটিল গণিত

সমাধানের চেষ্টায় বৃথা পরিশ্রম মস্তিষ্কের 

আদি লগ্ন হতে এখন অব্দি আবিষ্কার হয় নি;

কাঙ্খিত ফলাফলের প্রত্যাশায়-

সে গণিত কষতে কষতে পেরিয়ে যায় মধ্যরাত

অতঃপর গভীর ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসে।


মহামারী বিদায় হ‌লে ।। শেখ সাদী মারজান

মহামারী বিদায় হ‌লে 
আবার দেখা হ‌বে।
স্মৃ‌তিমাখা প্রিয় শহর
আবার মুখ‌রিত হ‌বে।

অসহায় মানুষ
অসহায় পৃ‌থিবী
চা‌রি‌দি‌কে করুণ আহাজা‌রি
পর্দায় হাজা‌রো শো‌কের ছ‌বি।

মানুষ এখন মানুষ থে‌কে দূ‌রে
তবুও পৃ‌থিবী থে‌মে নেই
লা‌শের মি‌ছিল কখন থাম‌বে
সময় কা‌রো জানা নেই।

নিরব ঘাতক চির‌দিন থাক‌বে না
দূর হ‌য়ে যা‌বে, সু‌-দিন আস‌বে
প্রিয় হারা‌নোর ক্ষত
হৃদ‌য়ে জ্ব‌লে উঠ‌বে।



বইটি হাতে পেয়ে পড়ার লোভ সামলাতে পারিনি ।। দিলরুবা নীলা

কবি ও বাচিকশিল্পী শেখ সাদী মারজানের মধ্যবিত্ত জীবনের মানে বইটি হাতে পেলাম ১৬/৩/২০২১ তারিখে। বইটি হাতে পেয়ে পড়ার লোভ সামলাতে পারিনি। ঝটপট পড়ে ফেলেছিলাম। অসাধারণ এই বইটিতে ৪০ টি ভিন্ন স্বাদের কবিতা আছে যা পাঠক মনের সুপ্ত আকাঙ্খাকে সহজেই নিবৃত্ত করতে পারবে সহজেই। বইটির মধ্যবিত্ত জীবনের মানে, দুর্দশা মধ্যবিত্ত জীবনের, কর্মজীবি নারী  এ-সকল কবিতায় কবি মধ্যবিত্ত জীবনের  চিত্র সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আবার মৃত্যুর মৌসুম, করোনা ঢেউ, মহামারীর শহরে এ-কবিতাগুলোতে ফুটিয়ে তুলেছেন বর্তমান বৈশ্বিক দূর্যোগ করোনার চিত্র। তিনি প্রিয়তম প্রকৃতি, মাটির ঘ্রাণ এ-কবিতাগুলোয় বর্ণনা করেছেন বাংলার প্রকৃতিকে। ভালোবাসা এখন কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছেন বর্তমান যুগের স্বার্থকেন্দ্রিক ভালোবাসাকে।এ ছাড়াও কবির প্রিয় কিছু মানুষকে নিয়েও লেখাও ঠাঁই পেয়েছে কাব্যগ্রন্থটিতে। একজন লেখক হিসাবে আমি লিখতে গিয়ে আমার সব লেখার মধ্যে একটি বিশেষ দিক সব সময় ফুটে ওঠে। কিন্তু কবি শেখ সাদী মারজান তার লেখায় বৈচিত্র্য এনেছেন দারুণ ভাবে।একজন পাঠক হিসেবে আমি মুগ্ধ। কবিতা প্রেমী যে কেউ সংগ্রহ করতে পারেন বইটি।পাওয়া যাচ্ছে বই মেলার ৩৬৮ নং চলন্তিকা স্টলে। এছাড়াও রকমারি ডট কমসহ বেশ কিছু অনলাইন পরিবেশক হাউজে পাওয়া যাচ্ছে।

প্রচ্ছদ: আল নোমান
প্রকাশনী: চলন্তিকা।
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
মূল্য: ১০০ টাকা



ফরিদপুরের কবি শেখ সাদী মারজানের স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায় ।। বিজয় পোদ্দার

অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় প্রকাশ পেয়েছে ফরিদপুরের নতুন প্রজন্মের কবি শেখ সাদী মারজানের স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায় । ঢাকার চলন্তিকা প্রকাশনা সংস্থা বইটি প্রকাশ করেছে। কাব্য গ্রন্থের উৎসর্গ করা হয়েছে সামন্ত দেব নাথকে। মূল্য: ৮০ টাকা। ফরিদপুর বইমেলায় প্রেস ক্লাবের স্টলে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। ৪৮টি কবিতার মধ্যে নতুন আঙ্গিকে স্বপ্ন সংকল্প বুনেছেন তিনি। আবার সময়কাল বাস্তবতার খরতা তুলে ধরেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখেছেন “বঙ্গবন্ধু তোমাকে দরকার/এই বাংলায় আরো একবার……” আবার আগুন কাব্যে বলেছেন “আগুন থাকে ভাতের উনুনে/ আগুন থাকে শ্বশানে।/আগুন ছিল রাজ পথে/আগুন ছিল ফাগুনে.. বেকার কবিতায় টেনেছেন “ছেলেটির মনে সুখ নেই/স্বপ্ন গুলো ক্রমেই হচ্ছে ঝাপসা”। প্রত্যেকটি কবিতায় সহজ ভাষায় একেছেন বাস্তবতার কঠিন অধ্যায়কে। তিনি ভাল আবৃত্তিকার বাংলা সাহিত্যের বাইরে ইংরেজী সাহিত্যেও মন নিবেস রয়েছে তার। বেশ কিছু কাব্য গ্রন্থ ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রকাশ পেয়েছে। পৈতৃক নিবাস ফরিদপুরের কানাইপুরে পিতা মোতলেব শেখ, মাতা লুৎফন্নেসা তার অপর সহদর সাকিব মারুফ ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতক  করছেন। কবিতা ও আবৃত্তির নেশায় দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ান আবৃত্তি বিষয়ক অনলাইন সাময়িকী আবৃত্তিকার ডট কম (www.abrittikar.com) প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নাড়ীর টানে ফরিদপুরের অঞ্চলের সাথে তার স্বপ্ন সংকল্পের বসবাস; স্বপ্ন দেখেন সুখি-সমৃদ্ধ পূর্ণ বাংলাদেশের।





ভবিষ্যতের শক্তিশালী কবির মুখ ।। শুভঙ্কর দাস

 

কবিতা ব্যক্তিমননের শস্য। তার জন্য ধান-পানের মতো আলো-বাতাস-জল লাগে। সেইসঙ্গে লাগে রক্তের তাপ ও তপস্যা। নবীন কবি শেখ সাদী মারজান মননক্ষেত্রে আবেগী ও আলোকময়। নিজের পরিচিত বৃত্তই তাঁর কবিতার পথচলা। কারণ তিনি নিজেই জানেন,'একটাই জীবন' জান্নাত হোক বা জাহান্নাম, তা এখানেই। সেই জীবনসমুদ্রের ঢেউ সকলের চোখে পড়ে, কিন্তু কবিই তার ব্যাখ্যা ও বিবেক নির্মাণ করতে পারেন। কবি লিখেছেন- "সংকুচিত ডানার ছোট্ট পাখি/একা উড়ে কতদূর যেতে পারে?" এই সৎ ও সত্য উচ্চারণই এই কবির সাহস ও শক্তি। W.R. Reodgerr বলেছিলেন, the poetry of real life' এই সত্য শেখ সাদী প্রতিটি কবিতার চরণে প্রতিভাত করেছেন। কাব্যনির্মাণের যা কিছু দুর্বলতা,তাকে নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও আবেগে স্বতন্ত্র স্থাপত্য করতে পেরেছেন। এই কবিই যখন লেখেন- "বেদনার্ত বেহালার করুণ সুরের মতো" তখন ভবিষ্যতের শক্তিশালী কবির মুখ আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই।

 

শুভঙ্কর দাস

কবি

পশ্চিমবঙ্গ, ভারত




ড্যান্স জোকি ।। শেখ সাদী মারজান


টিভিতে নিউজ স্ক্রল যাচ্ছে। ব্রেকিং নিউজ! ডিজে সুন্দরী সানজিয়া গ্রেফতার। পরেরদিন দুপুরের সংবাদ বুলেটিনে জানা গেল বিজ্ঞ আদালত তাকে তিনদিনের রিমান্ড দিয়েছে। রিমান্ড জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া গেল চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য। সেই তথ্যমতে শুরু হলো অভিযান।  

    ও লেভেলের শিক্ষার্থী সাইফ; ধনী বাবা-মার একমাত্র সন্তান। এস গ্রপ অব কোম্পনীর চেয়ারম্যান ওর বাবা। সাইফের জন্য জাপান থেকে একটি টয়োটা গাড়ী আমদানী করা হয়েছে গত মাসে। আড্ডা প্রিয় সাইফ বন্ধুদের সাথে সময় কাটিয়ে নিজেই গাড়ী ড্রাইভ করে মধ্য রাতে বাসায় ফেরে । এটা ওর দৈনন্দিন রুটিন।  পড়াশোনার চেয়ে আড্ডার রুটিন সে শক্তভাবে বজায় রাখে। ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ায় মনোযোগ বেড়েছে তার। বেশ কিছু নতুন মেয়ে বন্ধু জুটেছে সেখানে। তাদের মধ্যে অন্যতম বন্ধু হচ্ছে সানজিয়া। সানজিয়া প্রফেশনাল ড্যান্স জোকি সংক্ষেপে যাকে বলে ডিজে। নামী-দামী হোটেল, ক্লাব, সুইমিংপুলগুলোতে তার শো হয়। সেখানে অনেক ধনী পরিবারের ইংরেজী মাধ্যমে পড়–য়া অতি আধুনিক ছেলে-মেয়েরাসহ উচ্চবিত্ত শ্রেণির লেকজান আসে। মাঝ রাত পর্যন্ত নেচে গেয়ে বিদেশী রঙিন পানি পান করে, নেশায় মাতোয়ারা হয়ে বাসায় ফেরে তারা।  


     কিছুদিন যাবত সানজিয়ার সাথে সাইফের ইনবক্সে কথোপকথন হচ্ছে। মাঝে-মধ্যে দেখাও করতে লাগলো ওরা। সানজিয়া তার ডিজে শো দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানালো। ডিজে শো দেখার জন্য নামী এক পাঁচ তারকা হোটেলে গেলো সাইফ। তিনহাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটে  প্রবেশ করে দেখতে পেল, সেখানে তার মতো আরো অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা এসেছেন। সবাই অতি-মডার্ন পোষাক গায়ে জড়ানো। 

     সানজিয়া প্রথমেই মাইক্রোফোনে হুরররে বলে চিৎকার দিয়ে সকলকে স্বাগত জানালো। এক মিনিট কথা বলে তার শো শুরু করলো। প্রথমেই বিভিন্ন ধরনের শব্দের প্রকরণ বাজাতে লাগলো; সেই সাথে অস্পষ্ট উচ্চারণে ইংরেজী-বাংলা-হিন্দি প্রভৃতি ভাষার উত্তেজনাপূর্ণ শব্দ-বাক্য ব্যাবহারের মাধ্যমে শুরু হলো ঝলমলে বাহারী রঙের আলোর ঝলকানিতে উচ্চ শব্দে বিদেশী যন্ত্র-গানের সুরে-তালে বেসামাল নাচ। ছেলে-মেয়ে একসাথে নাচছে। কেউ একা, কেউ সঙ্গিনীর হাত ধরে। ছোট ছোট কয়েকটি গ্রুপের মতো লক্ষ্য করা গেল।  কারো কারো হাতে বিদেশী রঙিন পানির বোতল। জগতের কথা মনে নেই যেন ওদের। ওরা যেন ভিন্ন আরেক পৃথিবীতে আছে তখন। মাঝে মাঝে সানজিয়া চিৎকার করে সবাইকে যেন উন্মত্ত আনন্দ করতে উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছে। শব্দ কমছে বাড়ছে। ঝলমলে বাহারী রঙের আলো জ¦লছে নিভছে। পরিবর্তন হচ্ছে রিমিক্স গানগুলো।  সাইফ বেশ ইনজয় করলো পুরো অনুষ্ঠানটি। বাংলাদেশে এমন মাস্তির জায়গা আছে! সাইফের সে ধারনা আগে ছিল না।  বাসায় ফিরে কল করে সানজিয়াকে অনুষ্ঠানের ভালো লাগা সম্পর্কে বললো, সেই সাথে ধন্যবাদ জানালো। পরবর্তী অনুষ্ঠানে যেন তাকে জানায়; সে অনুরোধও করলো। সে এখন থেকে নিয়মিত তার সব অনুষ্ঠান দেখবে ইচ্ছা প্রকাশ করলো। 


     এরপর থেকে সানজিয়ার শো-গুলোতে নিয়মিত যাওয়া শুরু করলো সাইফ। কখনও পাঁচ তারকা হোটলে, অভিজাত ক্লাবে, কখনো বা  ভিআইপি সুইমিংপুলে। এক পর্যায়ে সানজিয়ার সাথে অনেকটা গভীর সম্পর্ক তৈরী হলো তার।  প্রতিদিন সানজিয়ার সাথে কথা না বললে তার ভালো লাগে না। আস্তে আস্তে দেখা করা, কিছু সময় একসাথে থাকা, উপহার দেয়া নিয়মিত রুটিনে পরিণত হলো। সানজিয়াকে ছাড়া সে কিছু ভাবতেই পারছে না। সে এখন যেন তার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় তো বটেই দামী মানুষও যেন। 

     কিন্তু তার মতো আরো অনেক ছেলের সাথে সানজিয়ার এমন গভীর সম্পর্ক রয়েছে । বিশেষ করে তার বন্ধুদের তালিকায় ধনাঢ্য পরিবারের ছেলেদের সংখ্যা বেশি। সাইফ এতোটা আগে ভাবেনি, বুঝেনি। কিন্তু দিন যেতে সে সানজিয়ার অন্য রুপ দেখতে পেল। সাইফ তাকে বোঝাতে চেষ্টা করলো। সে তাকে অনেক ভালবাসে। সারাজীবনের সঙ্গী করতে চায়। কিন্তু সানজিয়া স্বাধীনচেতা। সে এতসব ভাবে নি। ভাবার সময়-ই বা কোথায়? যেহেতু সাইফের মতো বহু ছেলে তার কব্জায়। সুতরাং এসব ব্যাপার সে পাত্তা-ই দেয় না।  

    সাইফ সানজিয়াকে বোঝাতে গেলেই Ñ সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হলো। কিন্তু সানজিয়াকে সে অনেক ভালবাসে। তাকে নিয়ে সে ঘর বাধার স্বপ্ন দ্যাখে। এত স্মৃতি, এত সুন্দর সময় পার করার পর এখন সে তাকে ছেড়ে যাবে। মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাবে দু’বছরের সম্পর্ক। রাত যত গভীর হয় সাইফের কষ্ট তত বাড়তে থাকে। এদিকে লেখা-পড়ার বারোটা তো বেজেই গেছে। সাইফও মনে মনে পণ করে নিলো; সানজিয়াকে সে এত সহজে ছাড়বে না। তাকে যত অবহেলা করুক না কেন, সে তার চেষ্টা করেই যাবে। সে ভালবাসার দাবীতে তার কাছে বারবার ধর্না দিতে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ার ইনবক্সে, মোবাইল কলে বিভিন্নভাবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। ইনবক্স থেকে সাইফকে ব্লক করে দেয়। এরপর ফেলা হয় মোবাইলের ব্ল্যাক লিস্টে। অসহায়ের মতো সাইফ ডিজে শোগুলোতে অংশ নিয়ে উন্মত্ত নাচের সময়ও চিৎকার করে বলতে থাকেÑ আই লাভ ইউ সানজিয়া। আমাকে ছেড়ে যেওনা প্লিজ। তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কিছু ভাবতে পরি না। আমি তোমার সবকথা মেনে নিতে রাজি।  আমার কোনো ভুল হলে ক্ষমা করে দিও। এভাবেই কেটে গেল আরো একবছর। 

      এরই মাঝে বিশেষ একটি দিন উপলক্ষ্যে অভিজাত হোটেলে সানজিয়ার একক শো। সাইফও ঢুকলো টিকিট কেটে। রঙিন পানির বোতল হাতে সেও নাচতে লাগলো। শো শেষে সবাই যখন বাসায় ফিরছে, তখন সাইফ এগিয়ে গেল সানজিয়ার কাছে। সানজিয়াও হাসি-মুখে এগিয়ে এসে সাইফের হাত ধরলো। তারপর ঠোটে চুমু দিয়ে বললো- চলো বাবু সোনা। হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল একটা রুমের দিকে। এটা নতুন কিছু নয়, এরকম আগেও হয়েছে; সম্পর্ক যখন স্বাভাবিক ছিল। 


     পরদিন সকালে টেলিভিশনের খবর হোটেলের বাথরুমে এস গ্রুপের চেয়্যারম্যানের একমাত্র সন্তান সাইফের লাশ। প্রাথমিক অবস্থায় ধারনা করা হলো যে, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারনে এই অকাল মৃত্যু হতে পারে। পরবর্তীতে লাশ ময়না তদন্তের রিপোর্টে পাঠালে জানা গেল শুধু মদ্যপান কারন নয়; তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। 

        শুরু হলো তদন্ত। সিসি টিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ। ফুটেজে দেখা গেল সাইফের হাত ধরে রুমে নিয়ে যাচ্ছে সানজিয়া। তার ৩০ মিনিট পর রুম থেকে বের হলো সানজিয়াসহ আরো দু’জন মাঝ বয়সী পুরুষ। 


রাফিদের কাণ্ড ।। শেখ সাদী মারজান

 রুমের দরজা আটকিয়ে পড়তে বসেছে রিজুয়ানা। রুমের দরজা আটকে পড়তে বসার কারণ হচ্ছে- ছোট ভাই রাফিদের দুষ্টুমির অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়ার প্রচেষ্টা। রাফিদ এবার ছয় বছরে পা দিয়েছে। এরই মধ্যে তাকে দুষ্টুর শিরোমনি বললে ভুল হবে না। দুষ্টুমিতে অলিম্পিয়াড থাকলে সেখান থেকে সে হয়তো স্বর্ণপদক নিয়ে আসতো। অথবা দুষ্টুমির ওয়ার্ল্ড টুর্নামেন্ট থাকলে সে ট্রফি সে জয় করে নিয়ে আসতোই। দুষ্টুমির বিভিন্ন কৌশল সে আবিষ্কার করে। তাকে দুষ্টুমির গবেষকও বলা যেতে পারে। রাফিদ বিভিন্ন সময় নানা ধরনের কাণ্ড ঘটিয়ে তার দুষ্টুমির সক্ষমতার প্রমান দিয়েছে।

গত সপ্তাহে রিজুয়ানা ওর বান্ধবী অর্পার সাথে পদ্মবিল ভ্রমণের প্ল্যান করেছিল। বাসা থেকে প্রাইভেট এর উদ্দেশ্যে বের হবে। কিন্তু প্রাইভেট না পড়ে ওরা পদ্মবিলে যাবে। যাবতীয় প্ল্যান ওরা ফোনে ফোনে করেছে। সকালে যখন রিজুয়ানা বাসা থেকে বের হবে। তখন দরজার সামনে রাফিদ সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছে। রিজুয়ানা বললো-
– তুই সেজেগুজে কোথায় যাবি?
– তোমার সাথে পদ্মবিলে যাবো।
– আমি তো প্রাইভেটে পড়তে যাচ্ছি।
– না। তুমি পদ্মবিলে যাচ্ছো। আমি জানি। আমারে সাথে না নিলে আম্মু-আব্বুর কাছে সব বলে দিবো।
রাফিদের কথা শুনে রিজুয়ানা হতবাক! ও কী করে প্ল্যানটা জানলো! অগত্যা রাফিদকে সাথে নিয়ে পদ্মবিলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। চোখ ধাধানো পদ্মবিলে গিয়ে রাফিদ প্রথমে বায়না ধরলো তাকে অনেকগুলো লালপদ্ম ছিড়ে দিতে হবে। বায়না অনুযায়ী তাকে অনেকগুলো লালপদ্ম ছিড়ে দেয়া হলো। তারপর সে দ্বিতীয় বায়না ধরলো নৌকায় চড়বে। কিন্তু আশেপাশে খালি নৌকা দেখা যাচ্ছে না। রাফিদ নাছোড়বান্দা; নৌকায় সে চড়বেই চড়বে। এরপর কান্না শুরু করে দিল। রিজুয়ানা রেগেমেগে রাফিদের গালে বসিয়ে দিল এক থাপ্পর। থাপ্পর খেয়ে রাফিদ আরো জোরে কান্না শুরু করে দিল। তখন রিজুয়ানা বললো-
– চুপ কর।
– না।
– স্পাইসি চিপস কিনে দেবো।
– আচ্ছা দাও।
রাফিদকে স্পাইসি চিপস কিনে দেওয়া হলো। স্পাইসি চিপস হাতে পেয়ে রাফিদ বললো-
– ধন্যবাদ।

রিজুয়ানার ফাইনাল পরীক্ষার আর কিছুদিন বাকী। রাতের খাবার শেষে রিজুয়ানা ওর রুমে প্রবেশ করে দেখতে পেল- রাফিদ ওর পড়ার টেবিলের চেয়ারে চুপচাপ বসে আছে। রিজুয়ানা বললো তুই এখান থেকে বের হ। রাফিদ মাথা নীচু করে রিজুয়ানার রুম থেকে বের হয়ে গেল। রাতে পড়া শেষ করে ঘুমানোর পূর্বে রিজুয়ানার ফোন বেজে উঠলো। সুমি ফোন করেছে। আগামী পরশু রীতার জন্মদিন। যেভাবেই হোক উদযাপন করতে হবে। কিন্তু কয়েকদিন পরেই ফাইনাল পরীক্ষা। এ মুহূর্তে জন্মদিন উদযাপন করলে বাসা থেকে রাগ করবে। তাই গোপনে উদযাপন করতে হবে। অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো সুমির নানুর বাসায় উদযাপন করা হবে। কেকের অর্ডার, মোমবাতি, গিফট সবশেষে ফাটানোর জন্য ডিমের ব্যবস্থ্যা করতে হবে।

দুদিন পর দুপুরবেলা রিজুয়ানা বাসা থেকে বের হবে সুমির নানুর বাসার উদ্দেশ্যে; ঠিক তখনই দেখতে পেল রাফিদ নতুন জামা গায়ে, লাল প্যান্ট পড়ে, চুলে সিথি কেটে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে! রিজুয়ানা জিজ্ঞেস করলোÑ
– তুই সেজেগুজে কোথায় যাবি?
– তোমার সাথে।
– আমার সাথে মানে?
– সুমি আপুর নানুর বাসায় যাবো।
– কেন?
– জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। আমারে সাথে না নিলে আম্মুরে সব বলে দিবো।
রিজুয়ানা বিস্ময়মাখা দৃষ্টিতে রাফিদের দিকে তাকায়। ও কী করে জানলো? এখন ওর সাথে না নিয়ে উপায় নেই। আম্মুরে বলে দিলে আব্বুও জানবে, তারপর রাহাত ভাইয়া জানবে। পিঠে ঢিপিস ঢিপিস পড়বে। অগত্যা রাফিদরে সাথে নিয়েই রওয়ানা দিল।

সুমির নানুর বাসায় আরো কয়েকজন বান্ধবী এসছে। রাফিদকে আদর করে কোলে নিতে চাইলো। কিন্তু সে কারো কোলে উঠলো না। চেয়ারে বসে একা একা কিছু ভাবতে লাগলো। এরই মধ্যে টেবিলে কেক রেখে মোমবাতি জ্বালানো হলো। সবাই একসাথে উঠলো হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ বলে ফু দিয়ে মোমবাতি নেভাতেই রাফিদ বললো- সবাই দেখো কেকটা কেমন কালো, বলেই ছুরি দিয়ে কেকে বাসিয়ে দিল এক কোঁপ। ওর কাণ্ড দেখে সবাই থ হয়ে গেল। এরপর রিজুয়ানা রাগে গড়গড় করতে লাগলো। ডিম ফাটানো আর হলো না।

রিজুয়ানা বাসায় ফিরে চুপচাপ বসে আছে। এতো কষ্টের আয়োজন রাফিদ একাই মাটি করে দিল। এর মধ্যে রাফিদ এসে বললো-
-আপু তোমরা আজ ডিম ফাটাওনি কেনো?
-তুই যা এখান থেকে।
-আচ্ছা। আমি যাচ্ছি। আম্মু তোমারে খেতে ডাকছে।
রাফিদ অবশ্য আগেই খেয়ে নিয়েছে। খাওয়া শেষে রুমে এসে দেখলো রাফিদ খাটের কোনে বসে আছে। রিজুয়ানা বললো-
– তুই তোর কাজে যা।
রাফিদ যাচ্ছি বলে স্কেল নিয়ে দৌড় দিলো।

রিজুয়ানা চিন্তায় পড়ে গেল। সব প্ল্যান রাফিদ কী করে বুঝে যায়। ওকে এড়িয়ে চলার কোনো উপায় নেই। প্রাইভেটে গিয়ে বান্ধবীদের সাথে আলোচনা করতে লাগলো। রাফিদকে বাদ দিয়ে কী করে পরবর্তী কোনো কিছু করা যায়। সবশেষে বুদ্ধি বের হলো। সকালে রাফিদ ঘুম থেকে উঠার আগেই বাসা থেকে বের হতে হবে। তাহলে রাফিদ আর সঙ্গে যাওয়ার বায়না ধরতে পরবে না।

কিছুদিন পর পয়লা বসন্ত । স্কুলে বসন্তের অনুষ্ঠান হবে। রিজুয়ানা ও তার বান্ধবীরা প্ল্যান করলো, ওই দিন সকলেই বাসন্তী রঙয়ের ড্রেস পড়বে। হাফ পিরিয়ডের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে। রিজুয়ানা সকাল আটটার সময় বাসা থেকে বের হবে। কারণ রাফিদ সাড়ে আটটায় ঘুম থেকে উঠে। রাফিদ ঘুম থেকে জাগার আগেই যদি রিজুয়ানা বাসা থেকে বের হতে পারে তাহলে রাফিদকে আর সাথে নিতে হবে না।

বসন্তের প্রথম দিন সকালে রিজুয়ানার দরজায় ঠকঠক শব্দ। রাফিদ চিল্লাপাল্লা করছে। আপু উঠো। সকাল হয়ে গেছে। রিজুয়ানা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো তখন সকাল ০৭ঃ১০ বাজে। দরজা খুলে বিস্ময়ে হতবাক। রাফিদ বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবী গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিজুয়ানা জিজ্ঞেস করলো-
– তুই পাঞ্জাবী গায়ে দিয়েছিস কেন?
– আজ বসন্তের প্রথম দিন। তাই বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবী গায়ে দিয়েছি। তোমার সাথে স্কুলে যাবো।
– আমার সাথে স্কুলে কেন যাবি?
– তোমাদের স্কুলে আজ অনুষ্ঠান আছে, তাই যাবো।

রিজুয়ানা রাগে ফেটে পড়লো। রাফিদকে সাথে নিয়েই রওয়ানা দিলো স্কুলের দিকে। বান্ধবীরা সবাই বললো- রাফিদ আজও চলে এসেছে। রিজুয়ানা সবাইকে আজ সকালের কথা বললো। সবাই শুনে মন্তব্য করলো যে, রাফিদের ঘাড়ে হয়তো জ্বীন তাই সে সবকিছু জেনে যায়। আর এ জন্যই অনেক দুষ্টুমি করে।

কয়েকদিন পর রাতে রিজুয়ানা ইংরেজি বই খুঁজে পাচ্ছিল না। বই খুঁজতে খুঁজতে দেখতে পেল খাটের নীচে বইটি পড়ে আছে। খাটের নীচে হাত দিলো বই উঠানোর জন্য। হাতে নাগাল পাচ্ছিল না। অগত্যা মাথা ঝুকে বই উঠাতে গেল। বই হাতে নিয়ে মাথা বের করার সময় কিসের সাথে যেন গুতা লাগলো। তবে খাটের কাঠের সাথে নয়। টর্চ লাইট এনে জ¦ালিয়ে দেখতে পেল খাটের নীচের দিকের কাঠের সাথে স্কস্টেপ দিয়ে কিছু একটা লাগানো। তারপর সেটা খুলে এনে দেখতে পেল একটা পুরনো মোবাইল। তারপর চিনতে পারলো; এটা রাহাত ভাইয়ার পুরনো একটা মোবাইল। এটা হাতে নিয়ে রাফিদ খেলতো। বাটনে চাপ দিতেই স্ক্রিনে লাইট জ¦লে উঠলো। তারমানে এটি এখনও সচল রয়েছে। কিন্তু এটি এখানে স্কস্টেপ দিয়ে কে লাগিয়ে রেখেছে? নিশ্চয়ই রাফিদ এটি এখানে লুকিয়ে রেখেছে। রিজুয়ানা বাসার কাউকে কিছু না বলে মোবাইল ফোনটি ওর ব্যাগে রেখে দিল। পরের দিন রাফিদ রিজুয়ানার রুমে আসলো। রিজুয়ানা কিছু না বলে কৌশলে দেখতে লাগলো রাফিদ কি করে। রাফিদ খাটের কোনে বসে রইলো। তারপর একটা কলম নিয়ে খাটের নীচে ছুড়ে ফেলে দিল। তারপর সে খাটের নীচে গেল ফেলে দেওয়া কলমটি তুলতে। কলম তুলতে খাটের নীচে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ রইলো। তারপর বের হয়ে এলো। বেচারার মন খারাপ হয়ে গেল। আনমনে কিছু ভাবতে লাগলো যেন। রাতে ঘুমানোর সময় রাফিদ উৎপাত শুরু করে দিলো। সে ঘুমাতে চাইছে না। ঘুম পাড়ানোর জন্য আম্মু গান শোনাল, ছড়া শোনাল, গল্প শোনাল। কিন্তু সে কিছুতেই ঘুমাবে না। তারপর আম্মু জিজ্ঞেস করলো এমন করছে কেন? রাফিদ অভিযোগ দিলো রিজুয়ানা আপু তার খেলার পুরনো মোবাইল নিয়ে গেছে। মোবাইল না দিলে সে এখন কিছুতেই ঘুমাবে না। আম্মু বললো তুমি তোমার ট্যাব চালাও। ট্যাবে গান শোনো, কার্টুন দেখো। রাফিদ বললো- না, আমার ওই মোবাইলটি খুবই দরকার। তুমি রিজুয়ানা আপুক বলো আমার মোবাইলটি দিতে। এরপর জোরে কান্না শুরু করে দিল। কাঁদতে কাঁদতে বললো নানুরে ফোন দাও। আমি নানুর সাথে কথা বলবো। নানুকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো রিজুয়ানা আপু আমার মোবাইল নিয়ে গেছে; দিচ্ছে না। তুমি দিতে বলো। নানু রাহাতকে কল করে বললো, রিজুকে বলো রাফিদের মোবাইল ফেরত দিতে। রাহাত রিজুয়ানার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে দেখলো ওটা ওর সেই পুরাতন মোবাইল, যেটি সে পাঁচ বছর আগে কিনেছিল। দুই বছর আগে ব্যবহার বাদ দিয়ে ঘরে ফেলে রেখেছিল। রাহাত তার পুরাতন মোবাইলটি হাতে নিয়ে স্ক্রিনে টাচ করে দেখলো মোবাইলটি এখনও সচল। লক খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পেল ওখানে লাইভ ইয়ার্ড রেকর্ড নামে নতুন ধরনের একটা এ্যাপ চালু আছে। পরে রাহাতের মনে পড়লো এরকম একটা এ্যাপ রাফিদের ট্যাবেও সে দেখেছিল। তারপর রাফিদের ট্যাব হাতে নিয়ে ওই এ্যাপের ভিতর প্রবেশ করেই রেকর্ড অপশনে ঢুকে সে দেখতে পেল ওই মোবাইলের এ্যাপের সাথে রাফিদের ট্যাবের কানেকশন রয়েছে। ওখানকার সবকিছু এখানে রেকর্ড হয়ে আছে। এই রেকর্ডের মাধ্যমে রাফিদ রিজুয়ানার সমস্ত প্ল্যান জেনে যায়। রাহাত সব বুঝেও চুপচাপ থাকলো। ছয় বছরের রাফিদের উদ্ভাবিত এই টেকনোলোজি সম্পর্কে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো।




মানুষ ছুটছে ।। শেখ সাদী মারজান

মানুষগুলো ছুটে, শুধুই ছুটে

সবপথ লোকারণ্য
মহাসড়কে যানজট
অথচ, ঘরগুলো ফাঁকা।
মানুষ যেন পথেই থাকে
পথেই খায়
পথে ঘুমায়
অথচ, বড় ইমারত বানায়। 


সালাম ।। শেখ সাদী মারজান

সালাম সে তো পরম শান্তির দোয়া
স্নেহ-শ্রদ্ধা আর ভালবাসা জড়ানো
প্রিয় রাসুলের (.) আদর্শের ছোয়া। 
 
সালাম সে তো দূর রে দেয়
নের আকাশে জমে থাকা কালিমা
শত্রুকেও আপন রে নেয়।
 
সালাম সে তো সবার জন্য
ছোট-বড়ধনী-গরীবউচু-নীচু
ড়ে তোলে সম্প্রীতি অনন্য।
 
সালাম সে তো নেক ভালো কাজ
লাজ-শংকাভেদাভেদ সব ভুলে 
সালাম রীতি শুরু রে দাও আজ।


জোছনাবাসী।। শেখ সাদী মারজান

প্রতি পূর্ণিমায় আমি একা- হেঁটেছি
গ্রামের মেঠো পথ ধরে নির্জন মাঠে।
স্বপ্ন-দিঘীর শান বাঁধানো ঘাটে বসে
লোনা জলের ফোঁটায় গাল ভিজিয়েছি।
 
ইট-পাথরের এই শহরে একা- জাগি
ব্যালকনিতে বসে চন্দ্রকলার বর্ণ দেখি।

আসন্ন ফাগুন পূর্ণিমায় আবারও হাঁটবো
একা নয়, কেউ একজন হাত ধরবে!
নির্জন মাঠে নয়, কোলাহলমুখর প্রান্তরে
চারপাশে থাকবে অজস্র জোছনাবাসী।


স্বাধীন জাতির স্বাধীন‌ পিতা একটি সফল প্রযোজনা ।। শেখ সাদী মারজান

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিলো জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হ...