ভবিষ্যতের শক্তিশালী কবির মুখ ।। শুভঙ্কর দাস

 

কবিতা ব্যক্তিমননের শস্য। তার জন্য ধান-পানের মতো আলো-বাতাস-জল লাগে। সেইসঙ্গে লাগে রক্তের তাপ ও তপস্যা। নবীন কবি শেখ সাদী মারজান মননক্ষেত্রে আবেগী ও আলোকময়। নিজের পরিচিত বৃত্তই তাঁর কবিতার পথচলা। কারণ তিনি নিজেই জানেন,'একটাই জীবন' জান্নাত হোক বা জাহান্নাম, তা এখানেই। সেই জীবনসমুদ্রের ঢেউ সকলের চোখে পড়ে, কিন্তু কবিই তার ব্যাখ্যা ও বিবেক নির্মাণ করতে পারেন। কবি লিখেছেন- "সংকুচিত ডানার ছোট্ট পাখি/একা উড়ে কতদূর যেতে পারে?" এই সৎ ও সত্য উচ্চারণই এই কবির সাহস ও শক্তি। W.R. Reodgerr বলেছিলেন, the poetry of real life' এই সত্য শেখ সাদী প্রতিটি কবিতার চরণে প্রতিভাত করেছেন। কাব্যনির্মাণের যা কিছু দুর্বলতা,তাকে নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও আবেগে স্বতন্ত্র স্থাপত্য করতে পেরেছেন। এই কবিই যখন লেখেন- "বেদনার্ত বেহালার করুণ সুরের মতো" তখন ভবিষ্যতের শক্তিশালী কবির মুখ আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই।

 

শুভঙ্কর দাস

কবি

পশ্চিমবঙ্গ, ভারত




ড্যান্স জোকি ।। শেখ সাদী মারজান


টিভিতে নিউজ স্ক্রল যাচ্ছে। ব্রেকিং নিউজ! ডিজে সুন্দরী সানজিয়া গ্রেফতার। পরেরদিন দুপুরের সংবাদ বুলেটিনে জানা গেল বিজ্ঞ আদালত তাকে তিনদিনের রিমান্ড দিয়েছে। রিমান্ড জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া গেল চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য। সেই তথ্যমতে শুরু হলো অভিযান।  

    ও লেভেলের শিক্ষার্থী সাইফ; ধনী বাবা-মার একমাত্র সন্তান। এস গ্রপ অব কোম্পনীর চেয়ারম্যান ওর বাবা। সাইফের জন্য জাপান থেকে একটি টয়োটা গাড়ী আমদানী করা হয়েছে গত মাসে। আড্ডা প্রিয় সাইফ বন্ধুদের সাথে সময় কাটিয়ে নিজেই গাড়ী ড্রাইভ করে মধ্য রাতে বাসায় ফেরে । এটা ওর দৈনন্দিন রুটিন।  পড়াশোনার চেয়ে আড্ডার রুটিন সে শক্তভাবে বজায় রাখে। ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ায় মনোযোগ বেড়েছে তার। বেশ কিছু নতুন মেয়ে বন্ধু জুটেছে সেখানে। তাদের মধ্যে অন্যতম বন্ধু হচ্ছে সানজিয়া। সানজিয়া প্রফেশনাল ড্যান্স জোকি সংক্ষেপে যাকে বলে ডিজে। নামী-দামী হোটেল, ক্লাব, সুইমিংপুলগুলোতে তার শো হয়। সেখানে অনেক ধনী পরিবারের ইংরেজী মাধ্যমে পড়–য়া অতি আধুনিক ছেলে-মেয়েরাসহ উচ্চবিত্ত শ্রেণির লেকজান আসে। মাঝ রাত পর্যন্ত নেচে গেয়ে বিদেশী রঙিন পানি পান করে, নেশায় মাতোয়ারা হয়ে বাসায় ফেরে তারা।  


     কিছুদিন যাবত সানজিয়ার সাথে সাইফের ইনবক্সে কথোপকথন হচ্ছে। মাঝে-মধ্যে দেখাও করতে লাগলো ওরা। সানজিয়া তার ডিজে শো দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানালো। ডিজে শো দেখার জন্য নামী এক পাঁচ তারকা হোটেলে গেলো সাইফ। তিনহাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটে  প্রবেশ করে দেখতে পেল, সেখানে তার মতো আরো অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা এসেছেন। সবাই অতি-মডার্ন পোষাক গায়ে জড়ানো। 

     সানজিয়া প্রথমেই মাইক্রোফোনে হুরররে বলে চিৎকার দিয়ে সকলকে স্বাগত জানালো। এক মিনিট কথা বলে তার শো শুরু করলো। প্রথমেই বিভিন্ন ধরনের শব্দের প্রকরণ বাজাতে লাগলো; সেই সাথে অস্পষ্ট উচ্চারণে ইংরেজী-বাংলা-হিন্দি প্রভৃতি ভাষার উত্তেজনাপূর্ণ শব্দ-বাক্য ব্যাবহারের মাধ্যমে শুরু হলো ঝলমলে বাহারী রঙের আলোর ঝলকানিতে উচ্চ শব্দে বিদেশী যন্ত্র-গানের সুরে-তালে বেসামাল নাচ। ছেলে-মেয়ে একসাথে নাচছে। কেউ একা, কেউ সঙ্গিনীর হাত ধরে। ছোট ছোট কয়েকটি গ্রুপের মতো লক্ষ্য করা গেল।  কারো কারো হাতে বিদেশী রঙিন পানির বোতল। জগতের কথা মনে নেই যেন ওদের। ওরা যেন ভিন্ন আরেক পৃথিবীতে আছে তখন। মাঝে মাঝে সানজিয়া চিৎকার করে সবাইকে যেন উন্মত্ত আনন্দ করতে উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছে। শব্দ কমছে বাড়ছে। ঝলমলে বাহারী রঙের আলো জ¦লছে নিভছে। পরিবর্তন হচ্ছে রিমিক্স গানগুলো।  সাইফ বেশ ইনজয় করলো পুরো অনুষ্ঠানটি। বাংলাদেশে এমন মাস্তির জায়গা আছে! সাইফের সে ধারনা আগে ছিল না।  বাসায় ফিরে কল করে সানজিয়াকে অনুষ্ঠানের ভালো লাগা সম্পর্কে বললো, সেই সাথে ধন্যবাদ জানালো। পরবর্তী অনুষ্ঠানে যেন তাকে জানায়; সে অনুরোধও করলো। সে এখন থেকে নিয়মিত তার সব অনুষ্ঠান দেখবে ইচ্ছা প্রকাশ করলো। 


     এরপর থেকে সানজিয়ার শো-গুলোতে নিয়মিত যাওয়া শুরু করলো সাইফ। কখনও পাঁচ তারকা হোটলে, অভিজাত ক্লাবে, কখনো বা  ভিআইপি সুইমিংপুলে। এক পর্যায়ে সানজিয়ার সাথে অনেকটা গভীর সম্পর্ক তৈরী হলো তার।  প্রতিদিন সানজিয়ার সাথে কথা না বললে তার ভালো লাগে না। আস্তে আস্তে দেখা করা, কিছু সময় একসাথে থাকা, উপহার দেয়া নিয়মিত রুটিনে পরিণত হলো। সানজিয়াকে ছাড়া সে কিছু ভাবতেই পারছে না। সে এখন যেন তার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় তো বটেই দামী মানুষও যেন। 

     কিন্তু তার মতো আরো অনেক ছেলের সাথে সানজিয়ার এমন গভীর সম্পর্ক রয়েছে । বিশেষ করে তার বন্ধুদের তালিকায় ধনাঢ্য পরিবারের ছেলেদের সংখ্যা বেশি। সাইফ এতোটা আগে ভাবেনি, বুঝেনি। কিন্তু দিন যেতে সে সানজিয়ার অন্য রুপ দেখতে পেল। সাইফ তাকে বোঝাতে চেষ্টা করলো। সে তাকে অনেক ভালবাসে। সারাজীবনের সঙ্গী করতে চায়। কিন্তু সানজিয়া স্বাধীনচেতা। সে এতসব ভাবে নি। ভাবার সময়-ই বা কোথায়? যেহেতু সাইফের মতো বহু ছেলে তার কব্জায়। সুতরাং এসব ব্যাপার সে পাত্তা-ই দেয় না।  

    সাইফ সানজিয়াকে বোঝাতে গেলেই Ñ সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হলো। কিন্তু সানজিয়াকে সে অনেক ভালবাসে। তাকে নিয়ে সে ঘর বাধার স্বপ্ন দ্যাখে। এত স্মৃতি, এত সুন্দর সময় পার করার পর এখন সে তাকে ছেড়ে যাবে। মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাবে দু’বছরের সম্পর্ক। রাত যত গভীর হয় সাইফের কষ্ট তত বাড়তে থাকে। এদিকে লেখা-পড়ার বারোটা তো বেজেই গেছে। সাইফও মনে মনে পণ করে নিলো; সানজিয়াকে সে এত সহজে ছাড়বে না। তাকে যত অবহেলা করুক না কেন, সে তার চেষ্টা করেই যাবে। সে ভালবাসার দাবীতে তার কাছে বারবার ধর্না দিতে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ার ইনবক্সে, মোবাইল কলে বিভিন্নভাবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। ইনবক্স থেকে সাইফকে ব্লক করে দেয়। এরপর ফেলা হয় মোবাইলের ব্ল্যাক লিস্টে। অসহায়ের মতো সাইফ ডিজে শোগুলোতে অংশ নিয়ে উন্মত্ত নাচের সময়ও চিৎকার করে বলতে থাকেÑ আই লাভ ইউ সানজিয়া। আমাকে ছেড়ে যেওনা প্লিজ। তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কিছু ভাবতে পরি না। আমি তোমার সবকথা মেনে নিতে রাজি।  আমার কোনো ভুল হলে ক্ষমা করে দিও। এভাবেই কেটে গেল আরো একবছর। 

      এরই মাঝে বিশেষ একটি দিন উপলক্ষ্যে অভিজাত হোটেলে সানজিয়ার একক শো। সাইফও ঢুকলো টিকিট কেটে। রঙিন পানির বোতল হাতে সেও নাচতে লাগলো। শো শেষে সবাই যখন বাসায় ফিরছে, তখন সাইফ এগিয়ে গেল সানজিয়ার কাছে। সানজিয়াও হাসি-মুখে এগিয়ে এসে সাইফের হাত ধরলো। তারপর ঠোটে চুমু দিয়ে বললো- চলো বাবু সোনা। হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল একটা রুমের দিকে। এটা নতুন কিছু নয়, এরকম আগেও হয়েছে; সম্পর্ক যখন স্বাভাবিক ছিল। 


     পরদিন সকালে টেলিভিশনের খবর হোটেলের বাথরুমে এস গ্রুপের চেয়্যারম্যানের একমাত্র সন্তান সাইফের লাশ। প্রাথমিক অবস্থায় ধারনা করা হলো যে, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারনে এই অকাল মৃত্যু হতে পারে। পরবর্তীতে লাশ ময়না তদন্তের রিপোর্টে পাঠালে জানা গেল শুধু মদ্যপান কারন নয়; তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। 

        শুরু হলো তদন্ত। সিসি টিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ। ফুটেজে দেখা গেল সাইফের হাত ধরে রুমে নিয়ে যাচ্ছে সানজিয়া। তার ৩০ মিনিট পর রুম থেকে বের হলো সানজিয়াসহ আরো দু’জন মাঝ বয়সী পুরুষ। 


রাফিদের কাণ্ড ।। শেখ সাদী মারজান

 রুমের দরজা আটকিয়ে পড়তে বসেছে রিজুয়ানা। রুমের দরজা আটকে পড়তে বসার কারণ হচ্ছে- ছোট ভাই রাফিদের দুষ্টুমির অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়ার প্রচেষ্টা। রাফিদ এবার ছয় বছরে পা দিয়েছে। এরই মধ্যে তাকে দুষ্টুর শিরোমনি বললে ভুল হবে না। দুষ্টুমিতে অলিম্পিয়াড থাকলে সেখান থেকে সে হয়তো স্বর্ণপদক নিয়ে আসতো। অথবা দুষ্টুমির ওয়ার্ল্ড টুর্নামেন্ট থাকলে সে ট্রফি সে জয় করে নিয়ে আসতোই। দুষ্টুমির বিভিন্ন কৌশল সে আবিষ্কার করে। তাকে দুষ্টুমির গবেষকও বলা যেতে পারে। রাফিদ বিভিন্ন সময় নানা ধরনের কাণ্ড ঘটিয়ে তার দুষ্টুমির সক্ষমতার প্রমান দিয়েছে।

গত সপ্তাহে রিজুয়ানা ওর বান্ধবী অর্পার সাথে পদ্মবিল ভ্রমণের প্ল্যান করেছিল। বাসা থেকে প্রাইভেট এর উদ্দেশ্যে বের হবে। কিন্তু প্রাইভেট না পড়ে ওরা পদ্মবিলে যাবে। যাবতীয় প্ল্যান ওরা ফোনে ফোনে করেছে। সকালে যখন রিজুয়ানা বাসা থেকে বের হবে। তখন দরজার সামনে রাফিদ সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছে। রিজুয়ানা বললো-
– তুই সেজেগুজে কোথায় যাবি?
– তোমার সাথে পদ্মবিলে যাবো।
– আমি তো প্রাইভেটে পড়তে যাচ্ছি।
– না। তুমি পদ্মবিলে যাচ্ছো। আমি জানি। আমারে সাথে না নিলে আম্মু-আব্বুর কাছে সব বলে দিবো।
রাফিদের কথা শুনে রিজুয়ানা হতবাক! ও কী করে প্ল্যানটা জানলো! অগত্যা রাফিদকে সাথে নিয়ে পদ্মবিলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। চোখ ধাধানো পদ্মবিলে গিয়ে রাফিদ প্রথমে বায়না ধরলো তাকে অনেকগুলো লালপদ্ম ছিড়ে দিতে হবে। বায়না অনুযায়ী তাকে অনেকগুলো লালপদ্ম ছিড়ে দেয়া হলো। তারপর সে দ্বিতীয় বায়না ধরলো নৌকায় চড়বে। কিন্তু আশেপাশে খালি নৌকা দেখা যাচ্ছে না। রাফিদ নাছোড়বান্দা; নৌকায় সে চড়বেই চড়বে। এরপর কান্না শুরু করে দিল। রিজুয়ানা রেগেমেগে রাফিদের গালে বসিয়ে দিল এক থাপ্পর। থাপ্পর খেয়ে রাফিদ আরো জোরে কান্না শুরু করে দিল। তখন রিজুয়ানা বললো-
– চুপ কর।
– না।
– স্পাইসি চিপস কিনে দেবো।
– আচ্ছা দাও।
রাফিদকে স্পাইসি চিপস কিনে দেওয়া হলো। স্পাইসি চিপস হাতে পেয়ে রাফিদ বললো-
– ধন্যবাদ।

রিজুয়ানার ফাইনাল পরীক্ষার আর কিছুদিন বাকী। রাতের খাবার শেষে রিজুয়ানা ওর রুমে প্রবেশ করে দেখতে পেল- রাফিদ ওর পড়ার টেবিলের চেয়ারে চুপচাপ বসে আছে। রিজুয়ানা বললো তুই এখান থেকে বের হ। রাফিদ মাথা নীচু করে রিজুয়ানার রুম থেকে বের হয়ে গেল। রাতে পড়া শেষ করে ঘুমানোর পূর্বে রিজুয়ানার ফোন বেজে উঠলো। সুমি ফোন করেছে। আগামী পরশু রীতার জন্মদিন। যেভাবেই হোক উদযাপন করতে হবে। কিন্তু কয়েকদিন পরেই ফাইনাল পরীক্ষা। এ মুহূর্তে জন্মদিন উদযাপন করলে বাসা থেকে রাগ করবে। তাই গোপনে উদযাপন করতে হবে। অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো সুমির নানুর বাসায় উদযাপন করা হবে। কেকের অর্ডার, মোমবাতি, গিফট সবশেষে ফাটানোর জন্য ডিমের ব্যবস্থ্যা করতে হবে।

দুদিন পর দুপুরবেলা রিজুয়ানা বাসা থেকে বের হবে সুমির নানুর বাসার উদ্দেশ্যে; ঠিক তখনই দেখতে পেল রাফিদ নতুন জামা গায়ে, লাল প্যান্ট পড়ে, চুলে সিথি কেটে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে! রিজুয়ানা জিজ্ঞেস করলোÑ
– তুই সেজেগুজে কোথায় যাবি?
– তোমার সাথে।
– আমার সাথে মানে?
– সুমি আপুর নানুর বাসায় যাবো।
– কেন?
– জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। আমারে সাথে না নিলে আম্মুরে সব বলে দিবো।
রিজুয়ানা বিস্ময়মাখা দৃষ্টিতে রাফিদের দিকে তাকায়। ও কী করে জানলো? এখন ওর সাথে না নিয়ে উপায় নেই। আম্মুরে বলে দিলে আব্বুও জানবে, তারপর রাহাত ভাইয়া জানবে। পিঠে ঢিপিস ঢিপিস পড়বে। অগত্যা রাফিদরে সাথে নিয়েই রওয়ানা দিল।

সুমির নানুর বাসায় আরো কয়েকজন বান্ধবী এসছে। রাফিদকে আদর করে কোলে নিতে চাইলো। কিন্তু সে কারো কোলে উঠলো না। চেয়ারে বসে একা একা কিছু ভাবতে লাগলো। এরই মধ্যে টেবিলে কেক রেখে মোমবাতি জ্বালানো হলো। সবাই একসাথে উঠলো হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ বলে ফু দিয়ে মোমবাতি নেভাতেই রাফিদ বললো- সবাই দেখো কেকটা কেমন কালো, বলেই ছুরি দিয়ে কেকে বাসিয়ে দিল এক কোঁপ। ওর কাণ্ড দেখে সবাই থ হয়ে গেল। এরপর রিজুয়ানা রাগে গড়গড় করতে লাগলো। ডিম ফাটানো আর হলো না।

রিজুয়ানা বাসায় ফিরে চুপচাপ বসে আছে। এতো কষ্টের আয়োজন রাফিদ একাই মাটি করে দিল। এর মধ্যে রাফিদ এসে বললো-
-আপু তোমরা আজ ডিম ফাটাওনি কেনো?
-তুই যা এখান থেকে।
-আচ্ছা। আমি যাচ্ছি। আম্মু তোমারে খেতে ডাকছে।
রাফিদ অবশ্য আগেই খেয়ে নিয়েছে। খাওয়া শেষে রুমে এসে দেখলো রাফিদ খাটের কোনে বসে আছে। রিজুয়ানা বললো-
– তুই তোর কাজে যা।
রাফিদ যাচ্ছি বলে স্কেল নিয়ে দৌড় দিলো।

রিজুয়ানা চিন্তায় পড়ে গেল। সব প্ল্যান রাফিদ কী করে বুঝে যায়। ওকে এড়িয়ে চলার কোনো উপায় নেই। প্রাইভেটে গিয়ে বান্ধবীদের সাথে আলোচনা করতে লাগলো। রাফিদকে বাদ দিয়ে কী করে পরবর্তী কোনো কিছু করা যায়। সবশেষে বুদ্ধি বের হলো। সকালে রাফিদ ঘুম থেকে উঠার আগেই বাসা থেকে বের হতে হবে। তাহলে রাফিদ আর সঙ্গে যাওয়ার বায়না ধরতে পরবে না।

কিছুদিন পর পয়লা বসন্ত । স্কুলে বসন্তের অনুষ্ঠান হবে। রিজুয়ানা ও তার বান্ধবীরা প্ল্যান করলো, ওই দিন সকলেই বাসন্তী রঙয়ের ড্রেস পড়বে। হাফ পিরিয়ডের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে। রিজুয়ানা সকাল আটটার সময় বাসা থেকে বের হবে। কারণ রাফিদ সাড়ে আটটায় ঘুম থেকে উঠে। রাফিদ ঘুম থেকে জাগার আগেই যদি রিজুয়ানা বাসা থেকে বের হতে পারে তাহলে রাফিদকে আর সাথে নিতে হবে না।

বসন্তের প্রথম দিন সকালে রিজুয়ানার দরজায় ঠকঠক শব্দ। রাফিদ চিল্লাপাল্লা করছে। আপু উঠো। সকাল হয়ে গেছে। রিজুয়ানা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো তখন সকাল ০৭ঃ১০ বাজে। দরজা খুলে বিস্ময়ে হতবাক। রাফিদ বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবী গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিজুয়ানা জিজ্ঞেস করলো-
– তুই পাঞ্জাবী গায়ে দিয়েছিস কেন?
– আজ বসন্তের প্রথম দিন। তাই বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবী গায়ে দিয়েছি। তোমার সাথে স্কুলে যাবো।
– আমার সাথে স্কুলে কেন যাবি?
– তোমাদের স্কুলে আজ অনুষ্ঠান আছে, তাই যাবো।

রিজুয়ানা রাগে ফেটে পড়লো। রাফিদকে সাথে নিয়েই রওয়ানা দিলো স্কুলের দিকে। বান্ধবীরা সবাই বললো- রাফিদ আজও চলে এসেছে। রিজুয়ানা সবাইকে আজ সকালের কথা বললো। সবাই শুনে মন্তব্য করলো যে, রাফিদের ঘাড়ে হয়তো জ্বীন তাই সে সবকিছু জেনে যায়। আর এ জন্যই অনেক দুষ্টুমি করে।

কয়েকদিন পর রাতে রিজুয়ানা ইংরেজি বই খুঁজে পাচ্ছিল না। বই খুঁজতে খুঁজতে দেখতে পেল খাটের নীচে বইটি পড়ে আছে। খাটের নীচে হাত দিলো বই উঠানোর জন্য। হাতে নাগাল পাচ্ছিল না। অগত্যা মাথা ঝুকে বই উঠাতে গেল। বই হাতে নিয়ে মাথা বের করার সময় কিসের সাথে যেন গুতা লাগলো। তবে খাটের কাঠের সাথে নয়। টর্চ লাইট এনে জ¦ালিয়ে দেখতে পেল খাটের নীচের দিকের কাঠের সাথে স্কস্টেপ দিয়ে কিছু একটা লাগানো। তারপর সেটা খুলে এনে দেখতে পেল একটা পুরনো মোবাইল। তারপর চিনতে পারলো; এটা রাহাত ভাইয়ার পুরনো একটা মোবাইল। এটা হাতে নিয়ে রাফিদ খেলতো। বাটনে চাপ দিতেই স্ক্রিনে লাইট জ¦লে উঠলো। তারমানে এটি এখনও সচল রয়েছে। কিন্তু এটি এখানে স্কস্টেপ দিয়ে কে লাগিয়ে রেখেছে? নিশ্চয়ই রাফিদ এটি এখানে লুকিয়ে রেখেছে। রিজুয়ানা বাসার কাউকে কিছু না বলে মোবাইল ফোনটি ওর ব্যাগে রেখে দিল। পরের দিন রাফিদ রিজুয়ানার রুমে আসলো। রিজুয়ানা কিছু না বলে কৌশলে দেখতে লাগলো রাফিদ কি করে। রাফিদ খাটের কোনে বসে রইলো। তারপর একটা কলম নিয়ে খাটের নীচে ছুড়ে ফেলে দিল। তারপর সে খাটের নীচে গেল ফেলে দেওয়া কলমটি তুলতে। কলম তুলতে খাটের নীচে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ রইলো। তারপর বের হয়ে এলো। বেচারার মন খারাপ হয়ে গেল। আনমনে কিছু ভাবতে লাগলো যেন। রাতে ঘুমানোর সময় রাফিদ উৎপাত শুরু করে দিলো। সে ঘুমাতে চাইছে না। ঘুম পাড়ানোর জন্য আম্মু গান শোনাল, ছড়া শোনাল, গল্প শোনাল। কিন্তু সে কিছুতেই ঘুমাবে না। তারপর আম্মু জিজ্ঞেস করলো এমন করছে কেন? রাফিদ অভিযোগ দিলো রিজুয়ানা আপু তার খেলার পুরনো মোবাইল নিয়ে গেছে। মোবাইল না দিলে সে এখন কিছুতেই ঘুমাবে না। আম্মু বললো তুমি তোমার ট্যাব চালাও। ট্যাবে গান শোনো, কার্টুন দেখো। রাফিদ বললো- না, আমার ওই মোবাইলটি খুবই দরকার। তুমি রিজুয়ানা আপুক বলো আমার মোবাইলটি দিতে। এরপর জোরে কান্না শুরু করে দিল। কাঁদতে কাঁদতে বললো নানুরে ফোন দাও। আমি নানুর সাথে কথা বলবো। নানুকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো রিজুয়ানা আপু আমার মোবাইল নিয়ে গেছে; দিচ্ছে না। তুমি দিতে বলো। নানু রাহাতকে কল করে বললো, রিজুকে বলো রাফিদের মোবাইল ফেরত দিতে। রাহাত রিজুয়ানার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে দেখলো ওটা ওর সেই পুরাতন মোবাইল, যেটি সে পাঁচ বছর আগে কিনেছিল। দুই বছর আগে ব্যবহার বাদ দিয়ে ঘরে ফেলে রেখেছিল। রাহাত তার পুরাতন মোবাইলটি হাতে নিয়ে স্ক্রিনে টাচ করে দেখলো মোবাইলটি এখনও সচল। লক খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পেল ওখানে লাইভ ইয়ার্ড রেকর্ড নামে নতুন ধরনের একটা এ্যাপ চালু আছে। পরে রাহাতের মনে পড়লো এরকম একটা এ্যাপ রাফিদের ট্যাবেও সে দেখেছিল। তারপর রাফিদের ট্যাব হাতে নিয়ে ওই এ্যাপের ভিতর প্রবেশ করেই রেকর্ড অপশনে ঢুকে সে দেখতে পেল ওই মোবাইলের এ্যাপের সাথে রাফিদের ট্যাবের কানেকশন রয়েছে। ওখানকার সবকিছু এখানে রেকর্ড হয়ে আছে। এই রেকর্ডের মাধ্যমে রাফিদ রিজুয়ানার সমস্ত প্ল্যান জেনে যায়। রাহাত সব বুঝেও চুপচাপ থাকলো। ছয় বছরের রাফিদের উদ্ভাবিত এই টেকনোলোজি সম্পর্কে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো।




মানুষ ছুটছে ।। শেখ সাদী মারজান

মানুষগুলো ছুটে, শুধুই ছুটে

সবপথ লোকারণ্য
মহাসড়কে যানজট
অথচ, ঘরগুলো ফাঁকা।
মানুষ যেন পথেই থাকে
পথেই খায়
পথে ঘুমায়
অথচ, বড় ইমারত বানায়। 


সালাম ।। শেখ সাদী মারজান

সালাম সে তো পরম শান্তির দোয়া
স্নেহ-শ্রদ্ধা আর ভালবাসা জড়ানো
প্রিয় রাসুলের (.) আদর্শের ছোয়া। 
 
সালাম সে তো দূর রে দেয়
নের আকাশে জমে থাকা কালিমা
শত্রুকেও আপন রে নেয়।
 
সালাম সে তো সবার জন্য
ছোট-বড়ধনী-গরীবউচু-নীচু
ড়ে তোলে সম্প্রীতি অনন্য।
 
সালাম সে তো নেক ভালো কাজ
লাজ-শংকাভেদাভেদ সব ভুলে 
সালাম রীতি শুরু রে দাও আজ।


জোছনাবাসী।। শেখ সাদী মারজান

প্রতি পূর্ণিমায় আমি একা- হেঁটেছি
গ্রামের মেঠো পথ ধরে নির্জন মাঠে।
স্বপ্ন-দিঘীর শান বাঁধানো ঘাটে বসে
লোনা জলের ফোঁটায় গাল ভিজিয়েছি।
 
ইট-পাথরের এই শহরে একা- জাগি
ব্যালকনিতে বসে চন্দ্রকলার বর্ণ দেখি।

আসন্ন ফাগুন পূর্ণিমায় আবারও হাঁটবো
একা নয়, কেউ একজন হাত ধরবে!
নির্জন মাঠে নয়, কোলাহলমুখর প্রান্তরে
চারপাশে থাকবে অজস্র জোছনাবাসী।


আমরা বাঙালি

আমাদের এক ভাষা, আমরা এক জাতি
আমরা বাঙালি একসাথে উৎসবে মাতি
আমাদের এক ভূখণ্ড, একই শরীর গঙ্গা-পদ্মা
আছে সহস্র বছরের ইতিহাস মুছতে পারবেনা।
আমাদের ঈদ আমাদের পূজা
আজানের সুর আরতির শাখ
আমাদের বর্ষা শরত-বসন্ত আর পহেলা বৈশাখ
হাজার বছর হাজার যুগ একসাথে বেঁচে থাক

আবৃত্তি ।। শেখ সাদী মারজান

আবৃত্তি শিল্প হাজার বছর আগেও ছিল, পরেও থাকবে
কোরআন ও গীতায় আছে, সত্য-সুন্দরের সাথে আছে
মিশে ছিল-আছে-থাকবে সতত শিল্পিত জীবনের সাথে
শুদ্ধ উচ্চারণে প্রতিটি শব্দ পৌঁছে দেয় মানুষের কানে



দেবতা ভেবে ।। শেখ সাদী মারজান

দেবতা ভেবে তোমাদের পায়ে আমি অর্ঘ্য ঢেলেছি
আমার ক্ষুদ্র হৃদয় তোমাদের সেবায় শপে দিয়েছি
দিবানিশি ছুটেছি আমি পাগলা ঘোড়ার ন্যায়
কোনো কিছু না ভেবে শুধু তোমাদের কথায়
ভালবাসার প্রতিদানে অবহেলা পেয়েছি
তোমারদের স্বার্থে শুধু ব্যবহৃত হয়েছি
অতঃপর তোমাদের আসল দেবতা-রুপ দেখেছি
শত বিভ্রান্তির ভাজ খুলে আজ আমি বুঝেছি

তোমরা সুশীল-সভ্য-সুন্দর দেবতা রুপী হায়েনা
তোমাদের কখনোই ভালো মানুষ বলা যায়না

debota vebe দেবতা ভেবে - কবি শেখ সাদী মারজান


মালা জড়ানো ছবি ।। শেখ সাদী মারজান

অনলাইন পাগল শোভনের পরিচয় হয় আলট্রামডার্ন মেয়ে শ্বেতার সাথে। শ্বেতায় মগ্ন হয় শোভন । দিন-রাত সবকিছুই যেন শ্বেতা।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা না দিলে ভালো লাগেনা শ্বেতার । এ নিয়ে শোভনের সাথে মাঝে-মধ্যে একটু...। ঝগড়ার এক পর্যায়ে শ্বেতা বলে দেয়।
- তুমি আমার যোগ্য নও। আমি তোমার চেয়ে ভালো ছেলে আশা করি। কতো ছেলে আমার পিছে ঘুরে । এখন থেকে আমাকে বিরক্ত না করলে আমি খুশি হবো।
পরদিন সকালে শোভনকে ডাকছিল নাস্তা করার জন্য । দরজা খুলছিল না। ভেঙ্গে দেখলো শোভন ঝুলছে ফ্যানের সাথে ।
শোভনের মাল্য জড়ানো ছবি দেয়ালে ঝুলছে। শ্বেতা আগের মতোই বন্ধুদের সাথে মাস্তি করছে ।

শেখ সাদী মারজান এই কাব্য গ্রন্থে পরিণত চিন্তার ছাপ রেখেছেন ।। আবু রাইহান

চোখের জল ফেলা এত সহজ কথা নয়। কবি কোনদিন ফোঁস ফোঁস করে জনসমক্ষে কাঁদতে পারে না। প্রেমের কবিতায় সেই কথা উঠে আসে কবির মরমী কলমে। রাত্রি নিবিড় হলে প্রিয় জ্যোৎস্নায় বুকের গভীরে গোপন মরমী প্রেমের কথাগুলি সহজিয়া নারীর জন্য কবিতা হয়ে ঝরে পড়ে। সদ্য কলেজ পড়া শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখা শেখ সাদী মারজান একজন বিশ্বাসী মানুষ। দুচোখে মানুষের প্রতি প্রবল ভালবাসা, হৃদয়ে বিস্ময় ও অনন্ত জিজ্ঞাসা নিয়ে যৌবনে পথ চলা শুরু করেছিল। কিন্ত প্রিয়জনের বিশ্বাসহীনতায় হোঁচট খেয়ে ‍মুষড়ে না পড়ে কবিতার ভাষায় নিজের যন্ত্রনার দিনলিপি লিখে রেখেছেন তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ আলোর বিলাপ আঁধারের হাসি তে। কবিতার প্রতি নিবিড় ভালবাসার টানেই আবৃত্তি জগতে পা রেখেছিলেন কলেজ পড়ুয়া অবস্থায়। এখন তিনি দেশের একজন প্রতিশ্রুতিমান তরুণ আবৃত্তি শিল্পী। তাঁর গলার স্বরের অদ্ভূত মাদকতায় মুগ্ধ সব বয়সের কবি ও কবিতা প্রিয় পাঠক। বাংলাদেশের একুশে বইমেলায় প্রকাশ হতে যাচ্ছে তাঁর দ্বিতীয় কাব্য ‘রক্তমাখা প্রিয় বসন্ত’ ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্র শেখ সাদী মারজান এই কাব্য গ্রন্থে পরিণত চিন্তার ছাপ রেখেছেন। ব্যক্তিগত ভালবাসার জগৎটাকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বের দরবারে।সারা বিশ্বজুড়ে মানবিকতার চুড়ান্ত অবমাননা, ক্ষমতা দখলের উন্মত্ততায় যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় অহরহ রক্তক্ষরণ কবিকে যন্ত্রণায় বিদ্ধ করে, বিমর্ষ করে। কবির আজন্মের চাহিদা ভালবাসার শান্তির নীড়ে স্বপ্নে টাল খেয়ে যায়। মনে আশা একদিন ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে। এই বিশ্বাসে যন্ত্রণা মুক্তির পথ হিসেবে লিখেন মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধে প্রেমের ভাষায় মানবিক প্রতিবাদের কবিতা। কবিতায় তাঁর এই উত্তরণ আমাদের আশান্বিত করে।

একটি গানের জন্য।। শেখ সাদী মারজান

এখন মধ্য রাত; চারপাশ নিস্তব্ধ
তন্দ্রামাখা চোখ দুটি জেগে আছে
একটি গানের জন্য
কাঙ্ক্ষিত সুরের জন্য উদ্বেলিত প্রাণ ।

চেষ্টার ঢিলগুলো ব্যর্থ হয়ে ফিরে বারবার
তবুও হাল ছাড়বার নয়
এ যে প্রাণের পরম চাওয়া
হৃদয়ে লালিত সুপ্ত স্বপ্ন ।

আহা কোথায় পাবো ?
তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের খোরাক!
কবি ইমরোজ সোহেলের হাত থেকে স্মারক গ্রহণ করছেন-  শেখ সাদী মারজান 




পথ খুঁজি নতুন এক জীবনের ।। শেখ সাদী মারজান

তারাদের মতো আমিও জেগে থাকি
তাকিয়ে থাকি মনিটরে
অন্তর্জালে পৃথিবী দেখি
স্বার্থপরের মতো নিজেকে শুধু ভাবি

অনেক হিসেব কষে, অবশেষে
ব্যর্থ জীবনের হতাশায়
পালিয়ে যায় স্বপ্ন-আশা 
পথ খুঁজি নতুন এক জীবনের

হৃদয় ছুয়ে যায় সামি ইউসুফের সুর
আই আম নাও ওয়াইটিং
ওয়াইটিং ফোর সামথিং
হে মালিক তুমি আমাকে শক্ত করো
শেখ সাদী মারজান 

আয়না ।। শেখ সাদী মারজান

প্রতিদিন একবার আয়নার সামনে দাড়াই
ঘর থেকে বের হবার ঠিক আগ মুহূর্তে
আয়নাতে নিজের মুখ দেখি
এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করি
কপালের কাঁটা দাগটাও দেখি
একটি ব্যর্থ অবয়ব দেখি
সবকিছু পরিষ্কার দেখি
খুঁতগুলো দেখতে পাই নিখুঁতভাবে
অথচ শোধরানো হয়না কোনদিন
কাচের আয়না এতো কিছু দেখায়!
আমি শুধু দেখি, শুধুই দেখি
শেখ সাদী মারজান 

আগুন কাব্য ।। শেখ সাদী মারজান

আগুন থাকে ভাতের উনুনে আগুন থাকে শ্মশানে
আগুন ছিল রাজপথে আগুন ছিল ফাগুনে আগুন এখন নিমতলীতে চকবাজার ঘুরে বনানীতে আগুন এখন রাস্তা চিনে সিঁড়ি বেয়ে উঠে উঁচু তলায় সাধের বাড়ি, স্বপ্নপুরী জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় আগুন সে তো শক্তিশালী পানি ঢাললেই নিভে যায় আগুন সে তো অহঙ্কারী ইবলিসেরও পতন হয়
শেখ সাদী মারজান 


রক্তমাখা কোরআনের পাতা ।। শেখ সাদী মারজান

রক্তমাখা পবিত্র কোরআনের পাতা
রক্তে লাল মসজিদের আঙিনা
খোদার দরবারে প্রার্থনারত শান্তির পাখিরা
লাশ হয়ে পড়ে আছে মসজিদের আঙিনায়
পৃথিবী তাকিয়ে দেখো,
মিডিয়া চোখ খুলে দেখো
মানবতার ফেরিওয়ালারা দেখো
দেখো দেখো.......
মুসলমানের জীবন কত তুচ্ছ দেখো
ব্রেনটন হ্যারিসন টারান্টের অস্ত্রের তান্ডব দেখো
উগ্র উস্কানিদাতাদের পৈচাশিক উল্লাশ দেখো
খোদার দরবারে প্রার্থনারত শান্তির পাখিরা
                                   নিথর পড়ে আছে
আহত মানবতা চিৎকার করে কাঁদছে
শেখ সাদী মারজান

রক্তমাখা প্রিয় বসন্ত ।। শেখ সাদী মারজান

গাছের ডালে ফুটন্ত পলাশ শিমুল 
কোকিলের কুহুতানে মুখরিত চারদিক
সকালের সোনা রোদ ছড়িয়ে পড়েছে উঠোনে

মায়ের পাগল ছেলেটি চললো মিছিলে
বাংলা ভাষার মিছিলে
মায়ের ভাষার মিছিলে
"রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই"
হায়েনার বুলেট বিঁধলো ছেলেটির বুকে
পিচঢালা রাস্তায় পড়েছিল নিথর দেহ
মা খুঁজছে তার পাগল ছেলেকে
ছেলেটি মিছিলে গিয়েছিল
মায়ের ভাষার মিছিলে
বাংলা ভাষার মিছিলে
মা খুঁজছে তার পাগল ছেলেকে
রক্তমাখা পিচঢালা পথ
রক্তমাখা পলাশ শিমুলের বুক
রক্তমাখা প্রিয় বসন্ত
কোকিলের কণ্ঠে বেদনার সুর
প্রচ্ছদ- রক্তমাখা প্রিয় বসন্ত

আমার মতো করে ।। শেখ সাদী মারজান

আমি ভাবতে চাই
আমি হাসতে চাই
আমি কাঁদতে চাই
আমার মতো করে

আমি দেখতে চাই
আমি শুনতে চাই
আমি মানতে চাই
আমার মতো করে

আমি পড়তে চাই
আমি জানতে চাই
আমি লিখতে চাই
আমার মতো করে

শেখ সাদী মারজান

পশ্চিমবঙ্গের অন্ধ হুমায়ূন ভক্ত আবু রাইহান ।। শেখ সাদী মারজান

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের অজস্র পাঠক ভক্তের কথা প্রায় আমাদের সকলের জানা আছে। কিন্তু ওপার বাংলায় একজন অন্ধ হুমায়ূন ভক্ত রয়েছে, তিনি আবু রাইহান। পেশায় সাংবাদিক, নেশায় কবি। কবি-বহুমাত্রিক লেখক সাযযাদ কাদির প্রবর্তিত বাংলা কবিতা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিলেন আবু রাইহান। হুমায়ূন আহমেদের লেখা সবগুলো বই তিনি পড়েছেন। দেখেছেন তাঁর সবগুলো সিনেমা। বাংলাদেশে আসার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল প্রিয় কবি আল মাহমুদের সাথে দেখা করা এবং প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের নুহাশ পল্লী দেখা।


নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন ভক্ত আবু রাইহান

প্রথমে দেখা করেন আল মাহমুদের সাথে, এরপর যান নুহাশ পল্লীতে। তাঁর সাথে ছিলেন ওপার বাংলার কবি-কথাসাহিত্যিক আবদুস শুকুর খান, কবি তাজিমুর রহমান, বাংলাদেশের কবি আনিসুর রহমান খান, পুলিশ কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন, নাট্যজন আলী হাসান। নুহাশ পল্লীতে আবু রাইহানের দেখা হয় হুমায়ুন আহমেদের আরেক পাগল ভক্ত মোশাররফ এর সাথে, যিনি নুহাশ পল্লীর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্তে নিয়োজিত আছেন। মোশাররফ হুমায়ুন আহমেদের সব কয়টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন, তিনি একজন লোকসঙ্গীত শিল্পীও। মোশাররফ শোনান নুহাশ পল্লীর অনেক গল্প-কাহিনী, ঘুরে ঘুরে দেখান কোন জায়গায় হুমায়ুন আহমেদ বসতেন, কোন ঘরে থাকতেন ইত্যাদি। আবু রাইহান মুগ্ধচিত্তে শোনেন মোশাররফের কথাগুলো। নুহাশ পল্লী দেখেন আর মুগ্ধ হতে থাকেন। হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে নিজের লেখা গানটি মোশাররফ শোনান আবু রাইহানকে। সবশেষে হুমায়ূন আহমেদের কবরের সামনে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে যান আবু রাইহান। কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকার পর কবর জিয়ারত করেন।
হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত করছেন আবু রাইহান ও কবি-কথাসাহিত্যিক আবদুস শুকুর খান
ঢাকায় ফেরার পথে, গাড়ীতে বসে জীবিত হুমায়ূন আহমেদকে না দেখতে পারার আফসোস ব্যক্ত করেন হুমায়ূন ভক্ত আবু রাইহান।

Indian media's information terrorism

 What is  Information terrorism? Information terrorism means misleading people with false information and creating terrorism or inciting t...